জনাকীর্ণ শহর ঢাকায় সাঁড়াশির মতো ছড়ানো সরকারি ও বেসরকারি পরিবহনের রুটগুলো। বাসা থেকে বের হওয়ার পর মেলে না গন্তব্যের কাঙ্ক্ষিত পরিবহনটি। বিশেষ করে মেগাসিটির অধিবাসীদের বিরাট অংশকেই যাত্রার জন্য নির্ভর করতে হয় বাসের ওপর। নগরীজুড়ে বিভিন্ন রুটে বাসের চলাচল থাকলেও জ্যাম এড়িয়ে সময়মতো সঠিক বাসটি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। কোন বাস কোথায় যাচ্ছে এবং একই গন্তব্যে যাওয়ার বিকল্প পথে কোন বাসটি আছে; এগুলো আগে থেকে জানা সম্ভব হলে অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া যায়। আর এই ধকলটিই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে এখন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ঢাকার বাসরুট খুঁজে পেতে দরকারি কিছু মোবাইল অ্যাপ সম্পর্কে।
যে মোবাইল অ্যাপগুলোতে জানা যাবে ঢাকার বাসরুট
বাস রুট: ঢাকা সিটি
১১ এমবি’র (মেগাবাইট) এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি একদমই নতুন। ২০২৩-এর ৩ অক্টোবর সমস্ত বাসের গমন পথের তালিকা ও গুগল ম্যাপের ইন্টিগ্রেশনসহ এটি গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত হয়। পিওরসফট সল্যুশন নির্মিত পরিষেবাটির সর্বশেষ হালনাগাদ হয় ১৬ অক্টোবর।
এতে আছে যাত্রা শুরুর স্থান ও গন্তব্য নির্বাচনের সুবিধা। এ সময় যাত্রী তার বর্তমান অবস্থানের কাছাকাছি স্টেশনগুলোও দেখে নিতে পারেন। ফলে স্টেশনের নাম জানা না থাকলেও কাছাকাছি যে কোনো অবস্থান থেকে তার কাঙ্ক্ষিত বাসটি ধরতে পারবেন।
গুগল ম্যাপে সরাসরি পাওয়া যায় সকল স্টেশন এবং বাস চলাচলের তথ্য। এগুলো বাংলা ও ইংরেজিতে দেখার পাশাপাশি আছে ইন্টারফেসের মুড পরিবর্তনের উপায়।
অ্যাপের এই ১.১.১ ভার্সনটি অ্যান্ড্রয়েড ৫ ও তার উপরের সব স্তরে ব্যবহার করা যাবে।
গত দুই মাসের মধ্যে অ্যাপটি ৫ হাজারেরও অধিক বার ডাউনলোড করা হয়েছে। ৫৪টি রিভিউ থেকে এখন পর্যন্ত অ্যাপটির অর্জিত তারকা পয়েন্ট ৪.৪।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে দেশে সর্বপ্রথম তারবিহীন চার্জিং বৈদ্যুতিক যান উদ্ভাবন
ঢাকা সিটি বাস রুট
২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল চালু করা এই অ্যাপের বিশেষ দিক হলো এর সাবলিল সার্চ অপশন। অর্থাৎ এখানে সীমিত অপশন থেকে নির্বাচনের সীমাবদ্ধতা নেই।
তবে ৪.২ এমবি সাইজের অ্যাপটির অতিরিক্ত গুণগত মানগুলোও বেশ আকর্ষণীয়। এগুলো হলো- ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার পথ এবং আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ফোন নম্বর। এছাড়াও শহরের কোন মার্কেট কবে বন্ধ থাকে তা এখানে তালিকাবদ্ধও করা আছে।
২০২৩ এর ২৮ নভেম্বর হালনাগাদ করা অ্যাপটির বর্তমান সংস্করণ ১৫। অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ ও তারও বেশি অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারযোগ্য অ্যাপটি ইতোমধ্যে ৫০ হাজারেরও অধিক সংখ্যকবার ডাউনলোড করা হয়েছে। সেভেনটি ওয়ান ল্যাব নির্মিত অ্যাপটি ২৭০টি রিভিউ থেকে রেটিং পেয়েছে ৩.৭।
আরও পড়ুন: ছাড়ে রিয়েলমি ডিসপ্লে পরিবর্তন করার সুযোগ
ঢাকা বাস রুট
কোডারকো নির্মিত এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে আসে ২০২৩ এর ২৪ আগস্ট। শহরের লোকাল বাসগুলোর পাশাপাশি সিটিং বা কাউন্টার বাসগুলোর তালিকা থাকায় এটি একটি নির্ভরযোগ্য তথ্যভান্ডারে পরিণত হয়েছে।
৫.৮ এমবির এই অ্যাপে রয়েছে বাস কোম্পানি ও বিভিন্ন স্থানের নাম দিয়ে রুট দেখার সুবিধা। ২০২৩ এর ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ আপডেট হওয়ার পর থেকে এর ২.২ সংস্করণটি চালু রয়েছে। এরই মধ্যে অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে ১ হাজারেরও বেশিবার এবং ৩৬টি রিভিউ থেকে রেটিং পেয়েছে ৪.৩। অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হবে অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ এবং তার উপরের স্তরের অপারেটিং সিস্টেম।
আরও পড়ুন: অ্যাপেল আইফোন ১৫ রিভিউ: নতুন কী থাকছে?
ঢাকা সিটি বাস রুটস
নাম অনেকটা একই হলেও এনকোসিঙ্কের এই অ্যাপটি বেশ বড় এবং সেই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কিছু সুবিধা সম্বলিত। ১৪ এমবির এই অ্যাপে রয়েছে ১৫৬-এরও বেশি বাস, ২৮৭-এরও বেশি রুট তালিকা। এরই সঙ্গে কার্যকরি সার্চ অপশন আর বাসের ছবিগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে আলাদাভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে।
২০২৩-এর ২৬ মে থেকে চালু হওয়ার পর অ্যাপটির শেষ আপডেট দেয়া হয় ২৬ আগস্ট। এর মাঝেই ১১.০.০ সংস্করণটির ডাউনলোড সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। ন্যূনতম অ্যান্ড্রয়েড ৫ থাকলেই যে কোনো স্মার্টফোন ব্যবহারকারী নির্দ্বিধায় অ্যাপটি চালাতে পারবেন। ১৫টি রিভিউ থেকে অ্যাপটির অর্জিত তারকা পয়েন্ট ৩.৫।
বিডি বাস রুট
৬.১ এমবির এই অ্যাপটিতে ব্যবহারকারিরা পাচ্ছেন ১৫০-এর অধিক বাসের গমন পথ দেখার সুবিধা। ১০ হাজারের অধিক ডাউনলোড সংখ্যার নেপথ্যে রয়েছে এর সহজবোধ্য ইন্টারফেস। পরিবহনগুলোর ছবি থাকার কারণে ঢাকা শহরে একদম নবাগতরাও এর মাধ্যমে পেয়ে যান সরাসরি বাস চেনার অভিজ্ঞতা।
নিউএইজডেভস বিডি বাস রুট অ্যাপ প্রকাশ করে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর। ২৭ জন রিভিউদাতার কাছ থেকে ৩.৬ তারকা রেটিং প্রাপ্ত এই অ্যাপটি ২০২৩-এর ৬ নভেম্বরে সর্বশেষ হালনাগাদ হয়। অতঃপর এটি উন্নীত হয় ১.১.২ সংস্করণে। কমপক্ষে অ্যান্ড্রয়েড ৫ থাকলে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো যাবে এই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির অ্যাপে মিলবে দাফন ও পুরোনো কবরের তথ্য
কোন বাস কোথায় যায় (ঢাকা সিটি)
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে গুগল প্লে স্টোরে আসা অ্যাপটির আরেক নাম বাসরুট ইনফো (ঢাকা সিটি)। ৬.২ এমবি সাইজের এই অ্যাপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডিজিটাল অ্যাপস। প্রত্যেকটি বাস কোম্পানির জন্য এখানে মিলবে স্বতন্ত্র রোডম্যাপ।
এর বিশেষ দিক হচ্ছে এটি পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার ভিত্তিতে যে কোনো দূরত্বের ন্যায্য ভাড়া বলে দিতে পারে। এর জন্য এটি সরাসরি সংযুক্ত হয় ‘ভাড়া কত? বাস ভাড়ার তালিকা’ নামক অ্যাপের সঙ্গে, যেটি মূলত গ্লোবাল ডিজিটাল অ্যাপেরই আরেকটি ডিজিটাল পরিষেবা।
২৮ জন রিভিউদাতাদের কাছ থেকে ৩.৬ তারকা রেটিং প্রাপ্ত এই অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে ৫ হাজারেরও অধিক সংখ্যকবার। সর্বশেষ ২০২৩ এর ১৪ আগস্ট আপডেটের পর এর বর্তমান ভার্সন ২.২। অ্যাপটি চালানোর জন্য স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম কমপক্ষে অ্যান্ড্রয়েড ৫ থাকতে হবে।
শেষাংশ
ঢাকার বাসরুট জানার এই প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোর মধ্যে রেটিংয়ের দিক থেকে এগিয়ে আছে পিওরসফৎ সল্যুশনের পরিষেবাটি। তবে সেভেনটি ওয়ান ল্যাবের অ্যাপটি তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছে। নতুনগুলোর মধ্যে ব্যবহারযোগ্যতায় কোডারকো’র বাস গমন পথের তথ্যভান্ডারটি এগিয়ে। এখানে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়ে থাকছে নিউএইজডেভসের অ্যাপটি।
বেশি স্টোরেজ ক্ষমতা এনকোসিঙ্কের সেবার জন্য একটি বড় অসুবিধা হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। তবে ভাড়ার তথ্য জানার ফিচারের জন্য সবগুলোকে ছাপিয়ে যেতে পারে ‘কোন বাস কোথায় যায়’ অ্যাপটি।
সর্বোপরি, ঢাকার বাসরুট খোঁজার মোবাইল অ্যাপগুলো সামগ্রিকভাবে পরিবহন ব্যবস্থার ডিজিটালকরণের অভিমুখে এক বিশাল পদক্ষেপ।